তীব্র গরমে আপনার আদরের বিড়ালের যত্ন নিবেন যেভাবে
সারাদেশে চলছে হিট এলার্ট। তীব্র গরম আর গ্রীষ্মের দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। মানুষের পাশাপাশি আপনার আদরের বিড়ালটির কিন্তু কষ্ট হচ্ছে। সে খেয়াল কী আছে? গ্রীষ্মকালে বিড়াল নানান অস্বস্তিতে ভোগে। বিড়ালের গায়ে প্রচুর লোম থাকে। তাই তাপ আরো আটকে থাকে। এজন্য গরমে বিড়ালের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হয়। এসময় বিড়ালের হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা বেশি হয়ে থাকে। এসময়ে তাই পেটকেয়ারে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়। নইলে ঘটতে পারে বিপত্তি। যে বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে বুঝবেন বিড়ালের গরম লাগছে কিংবা কষ্ট হচ্ছে ,তা নিয়েই আজ আপনাদের বিস্তারিত জানাব। এছাড়া এই গরমে কিভাবে বিড়াল-কুকুরের যত্ন নিবেন, এ বিষয়েও ধারনা দেয়া হবে।
গরমে বিড়ালের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই এ সময় তাদের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন।
কিভাবে বুঝবেন আপনার বিড়ালের অতিরিক্ত গরম লাগছে?
১। বিড়ালের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেওয়া ।
২। ঠাণ্ডা জায়গা খোঁজার প্রবণতা দেখতে পাওয়া।
৩। ঘনঘন শরীর চাটা।
৪। শ্বাস-প্রশ্বাস খুব দ্রুত হয়ে যাওয়া।
৫। কুকুরের মতো জিহ্বা বের করে শ্বাস নেওয়া এবং লালা ঝরা।
৬। পায়ের পাতা অতিরিক্ত ঘামতে থাকা।
৭। ফ্লোরে ভেজা দাগ দেখা যায়।
৮। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
৯। জিহ্বা এবং নাকের ভেজা অংশ অতিরিক্ত লাল হয়ে যাওয়া।
১০। বমি করা।
১১। মাথা ঘুরানো।
১২। খুব সিভিয়ার কেস এ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
১৩. বিড়ালের মধ্যে অস্থিরতা এবং ঠাণ্ডা জায়গা খোঁজা
১৪. শ্বাস-প্রশ্বাস খুব দ্রুত হয়ে যাওয়া এবং মাত্রাতিরিক্ত শরীর চাটা
১৫. কুকুরের মতো জিহ্বা বের করে শ্বাস নেওয়া এবং লালা ঝরা
১৬. পায়ের পাতা অতিরিক্ত ঘামতে থাকা। এমন কি ফ্লোরে ভেজা দাগ দেখা যায়।
১৭. শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
১৮. জিহ্বা এবং নাকের ভেজা অংশ অতিরিক্ত লাল হয়ে যাওয়া
১৯. বমি করা
২০. মাথা ঘুরানো
২১. খুব সিভিয়ার কেস এ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
তীব্র গরমে আপনার আদরের বিড়ালের যত্ন নিবেন যেভাবে?
গরমে শুধু যে মানুষের কষ্ট হয় তা নয়। গরমে পশুপাখিরও হাঁসফাঁস লাগে, কষ্ট হয়। মানুষ সহজে তাদের খারাপ লাগাটা ব্যক্ত করতে পারে কিন্তু পশুপাখি বলতে পারে না। তাই গরম থেকে বাঁচাতে সচেতনতার পাশাপাশি বাড়তি যত্ন নিতে হয়। আসুন জেনে নিই গরমে কিভাবে বিড়ালের যত্ন নিবেন সে সম্পর্কে-
১। বিড়াল নিয়ে বাইরে বের হতে চাইলে ছায়াযুক্ত স্থান নির্বাচন করুন।
২। হালকা পশমযুক্ত কিংবা রঙীন বিড়ালের ক্ষেত্রে প্রখর রোদে সান বার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে এনিমেল ফ্রেন্ডলি সান ক্রিম ব্যব্যহার করা যায়।
৩। ডিহাইড্রেশনের সমস্যাটা মারাত্নক। তাই কোনোভাবেই আপনার বিড়ালটিকে পানিশূন্য হতে দিবেন না।
৪।যথেষ্ট ফ্যান রাখুন বাসায়। বাসার ভেন্টিলেশন যেন ঠিকমত কাজ করে সেই ব্যাপারটিও নিশ্চিত করুন।
৫। বিড়ালকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করবেন না। খেলার জন্য বরফ খন্ড দিন।
৬। বিড়ালের লোম নিয়মিত ব্রাশ করে দিন। এতে আটকে থাকা তাপের পাশাপাশি অন্যান্য ধুলাবালি দূর হবে।
৭। স্টোরহাউজ, রান্নাঘর থেকে বিড়ালকে দূরে রাখুন।
৮। বিড়ালকে একা গাড়িতে রেখে যাবেন না। গাড়ি পার্কিং-এর সময় ভেতরে বিড়াল রেখে শপিং এ যাবেন না।
৯। কুলিং ম্যাটস ও আইস প্যাক ব্যবহার করুন। কুলিং ম্যাটস এবং আইস প্যাক বিড়ালের বেডের পাশে রেখে দিন।
১০। দিনের বেলায় জানালা বন্ধ কিংবা পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখুন।
তীব্র গরমে বিড়ালের যত্নে করণীয় কী?
বিড়ালের অতিরিক্ত গরম লাগলে খুব দ্রুত তাকে ঠাণ্ডা পরিবেশে নিয়ে আসুন। তবে সরাসরি এসির সবচেয়ে কম তাপমাত্রায় নিয়ে আসবেন না।
বাসায় এসি না থাকলে, বেড়ালের গায়ের উপরে ভেজা কাপড় জড়িয়ে নিন। এরপর ফ্যান ছেড়ে দিন।
পায়ের পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
ভেজা কাপড় দিয়ে পা মুছে দিন।
সপ্তাহে একবার গোসল করিয়ে দিন।
প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ান।
বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা পানি দিতে হবে। বাড়ির বিভিন্ন স্থানে একাধিক পাত্রে পানি রেখে দিতে হবে। এতে জল খাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।
পানির সাথে স্যালাইন মিশিয়েও খাওয়াতে পারেন।
এ সময় যথাসম্ভব ড্রাইফুড দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
জেলী কিংবা ওয়েট ক্যাট ফুড খাওয়াতে পারেন।
ড্রাইফুড দেওয়া হলে, জোর করে হলেও পানি খাওয়ান।
একই খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখবেন না।
খাবার অল্টার করে দিন।
খুব বেশি কোলে নেওয়া কিংবা আপনার শরীরের সাথে লেপ্টে রাখবেন না।
বিড়ালটিকে ফ্রি স্পেস দিন।
ব্রিড কিংবা বিড়ালের ধরন বুঝে যত্ন নিন।
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
খাবার পানি
গরমে বিড়ালকে প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে। বিড়ালের খাবারের জায়গা বা তার আশে পাশে সব সময় পানির পাত্র রাখতে হবে যাতে সে ইচ্ছা মতো পানি পান করতে পারে। এক্ষেত্রে একটা জিনিস খেয়াল রাখা উচিত, বিড়াল ও কুকুরের পায়ের পাতা ঘামে। তাই তার চলার পথে বা বসে থাকার জায়গায় পায়ের ভেজা দাগ দেখলে বুঝতে হবে প্রচুর পানি শরীর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ তার পানি দরকার।
খাবার
গরমকালে অনেকেই অভিযোগ করেন বিড়াল খাবার কম খাচ্ছে। এটা আসলে স্বাভাবিক ব্যাপার। গবেষণায় দেখা গেছে বিড়াল গরমকালে শীতকালের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ খাবার কম খায়। গরমের সময় বিড়ালকে ফ্রেশ খাবার দিতে এবং শুকনো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ড্রাই ক্যাটফুড এড়িয়ে চেষ্টা করতে হবে ঘরোয়া খাবার খাওয়ানো। খাবারে তেল-চর্বির পরিমাণ শীতকালের তুলনায় অল্প হলে ভালো। বিস্কুট, কেক জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই উত্তম। স্ট্রেস কমানোর জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন, লেবুর রস, টক দই দেওয়া যায়। তবে সেটা খুব অল্প পরিমাণে। সপ্তাহে ২ বার।
ঘুম
বিড়াল প্রজাতিভেদে দিনে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায়। গরমকালে শরীরে অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন থেকে বাঁচতে ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নাই। তাকে তার মতো ঘুমোতে দিতে হবে।
খেলাধুলা
স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তবে গরমে বিড়াল খেলাধুলা একটু কমিয়ে শান্ত থাকতে চায়। খেয়াল রাখতে হবে সরাসরি রোদের মধ্যে যেন না যায়। খেলাধুলার সময়টা হবে সকাল এবং রাতে অর্থাৎ যখন একটু ঠাণ্ডা পরিবেশ থাকে।
গোসল
বিড়ালের গোসল নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পূর্ণ নিজস্ব। তবে শীতের তুলনায় ঘন ঘন গোসল করানো যায় গরমের সময়। গোসল শরীর ঠাণ্ডা রাখার খুব সহজ একটা উপায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কানে যেন পানি না ঢুকে এবং গোসলের পর অবশ্যই গা ভালো ভাবে শুকিয়ে দিতে হবে। এছাড়া খুব গরমের সময় পায়ের পাতা বার বার ভেজা কাপড়ে মুছে দিলে বা পানিতে ভিজিয়ে রাখলেও শরীর খুব দ্রুত ঠাণ্ডা হয়। গোসল করাতে না চাইলে প্রতিদিন ভেজা কাপড়ে গা মুছে দেওয়া যায়।
গ্রুমিং
গরমের সময় বিড়াল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি নিজের শরীর চাটে। এতে করে মুখের লালা গায়ে লাগে এবং সেটা বাষ্পীভূত হওয়ার সময় শরীর ঠাণ্ডা হয়। তাই এটা দেখে ভয় পাবার কিছু নাই। পার্সিয়ান, ম্যানিকোন ইত্যাদি লোমস বিড়ালের ক্ষেত্রে গরমের আগে গায়ের লোম হালকা ট্রিম করে দেওয়া ভালো। এতে করে লোম পড়া অনেক কমে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এছাড়াও গরমে প্রচুর মাইট, ম্যাগট, ফ্লী এগুলো হয় গায়ে। তাই গরমে প্রতিদিন বিড়ালের লোম আঁচড়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে পরজীবী দূরে থাকবে এবং ভেঙে যাওয়া লোম ফেলে দেওয়া সহজ হয়।
থাকার জায়গা
গরমের সময় অবশ্যই বিড়ালকে ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা না লাগে। এ সময় কোনো ভাবেই বিড়াল ছাদে আটকে রাখা যাবে না।










